সংসদীয় আসন পুননির্ধারণে ‘প্রাধান্য পাবে’ ভোটার সংখ্যা
সংবাদ প্রতিনিধি | ১১:৩১ মিঃ, নভেম্বর ৫, ২০১৭
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে সংসদীয় আসন পুননির্ধারণের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যাকেও প্রাধান্য দেবে নির্বাচন কমিশন।
সেই সঙ্গে বড় বড় শহরের সংসদীয় আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করার কথাও ভাবছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংলাপে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের মতামতকে নিয়েই সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
এবিষয়ে বিএনপির মতামত জানানোর পর জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে এবার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
এবিষয়ে সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে। আমরা এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করে দিয়েছি ইতিমধ্যে। সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা ও ভোটার অনুপাতকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবো।”
নির্বাচন কমিশনের খসড়া কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা প্রতিবছর হালনাগাদ হওয়ায় সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শুধু জনসংখ্যার উপর ভিত্তি না করে ভোটারসংখ্যা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
এর সঙ্গে বড় বড় শহরের আসনসংখ্যা সীমিত করে দিয়ে আয়তন, ভৌগলিক অখণ্ডতা ও উপজেলা ঠিক রেখে এবার সীমানা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে সোয়া ১৫ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ কোটি ১৮ লাখেরও বেশি নাগরিক ভোটার হয়েছেন। সেক্ষেত্রে প্রতি আসনে গড়ে ৫ লাখেরও বেশি জনসংখ্যা এবং ৩ লাখ ৪০ হাজারের মতো ভোটার সংখ্যার কম-বেশিকে বিবেচনায় কাজ করতে হবে।
এর আগে ২০০১ সালের আদমশুমারির জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় নির্বাচন প্রাক্কালে সংসদীয় সীমানার ব্যপক পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের সীমানা বেশিরভাগ বহাল রাখা হয়।
তবে নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন পুনর্বিন্যাসের সমালোচনা করে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের আসন বিন্যাস পুনর্বহাল করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর বলেন, “আমরা যৌক্তিক বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে চাই। জনসংখ্যা ও ভোটার বাড়লেও আসন সংখ্যা তিনশোর বেশি হচ্ছে না।
“তবে অতীতে কোনো জেলায় আসন বেড়েছে, আবার কমেছেও। কেন কমানো-বাড়ানো হয়েছে তা পর্যালোচনা করে যতদূর সম্ভব অখণ্ডতা বজায় রেখে আসন পুনর্বিন্যাস করা হবে।এর আগে সবার মতামতও নেওয়া হবে।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২০১১ সালের আদমশুমারির প্রকাশিত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরির মাধ্যমে সীমানা নির্ধারনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে কমিশন।
প্রথম সংসদ ও দ্বিতীয় সংসদের আসন বিন্যাস
১৯৭৩ সালে দিনাজপুরে ১০, রংপুরে ২২, বগুড়ায় ৯, রাজশাহীতে ১৭, পাবনায় ১২, কুষ্টিয়ায় ৭, যশোরে ১৩, খুলনায় ১৪, পটুয়াখালীতে ৭, বাখরগঞ্জে ১৭, টাঙ্গাইলে ৯, ময়মনসিংহে ৩২, ঢাকায়৩০, ফরিদপুরে ১৯, সিলেটে ২১, কুমিল্লায় ২৬, নোয়াখালীতে ১৪, চট্টগ্রামে ১৮ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ২টি আসন করা হয়।
১৯৭৯ সালে এসে ১টি করে আসন বাড়ে দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা; ২টি আসন বাড়ে ঢাকায় ও ফরিদপুরে।
১টি করে কমেছে পটুয়াখালী, বাখরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেটে এবং ২টি আসন কমে কুমিল্লায়।
ময়মনসিংহের ৩২টি আসনের মধ্যে ময়মনসিংহ ২৪ ও জামালপুর ৮ টি করা হয়।
তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন বিন্যাস
রাজশাহীতে ৫, সিরাজগঞ্জে ৭, সাতক্ষীরায় ৫, বরগুনায় ৩, পিরোজপুরে ৪, কিশোরগঞ্জে ৭, মানিকগঞ্জে ৪, মুন্সীগঞ্জে ৪, ঢাকায় ১৩, ফরিদপুরে ৫, কুমিল্লায় ১২, চাঁদপুরে ৬ ও চট্টগ্রামে ১৫টিআসন ছিল। পাবর্ত্য এলাকায় দুটি আসন করা হয়।
নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে আসন বিন্যাস
১টি করে আসন বাড়ে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও ১ টি আসন বাড়ানো হয়; খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান।
সেই সঙ্গে ঢাকায় ৭ টি আসন যুক্ত হয়। এর বিপরীতে সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পিরোজপুর, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, কুমিল্লা ও চাঁদপুরে ১টি করে আসন কমেছে।
পঞ্চগড়ে ২, ঠাকুরগাঁয়ে ৩, দিনাজপুরে ৬, নীলফামারি ৪, লালমনিরহাট ৩, রংপুর ৬, কুড়িগ্রাম ৪, গাইবান্ধা ৫, জয়পুরহাট ২, বগুড়া ৭, নবাবগঞ্জ (নওয়াবগঞ্জ) ৩, নওগাঁ ৬, নাটোর ৪, পাবনা ৫, মেহেরপুর ২, কুষ্টিয়া ৪, চুয়াডাঙ্গা ২, ঝিনাইদহ ৪, যশোর ৬, মাগুরা ২, নড়াইল ২, বাগেরহাট ৪, খুলনা ৬, পটুয়াখালী ৪, ভোলা ৪, বরিশাল (বাখরগঞ্জ) ৬, ঝালকাঠি ২, টাঙ্গাইল ৮, জামালপুর ৫, শেরপুর ৩, ময়মনসিং ১১, নেত্রকোণা ৫, গাজীপুর ৪, নরসিংদী ৫, নারায়ণগঞ্জ ৫, রাজবাড়ি ২, গোপালগঞ্জ ৩, মাদারীপুর ৩, শরীয়তপুর ৩, সুনামগঞ্জ ৫, সিলেট ৬, মৌলভীবাজার ৪, হবিগঞ্জ ৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬, ফেনী ৩, নোয়াখালী ৬, লক্ষ্মীপুর ৪ ও কক্সবাজারের আসন সংখ্যা ৪ হুবহু থেকে গেছে।
সীমানা পুননির্ধারণ কর্মপরিকল্পনা
আগস্ট : নির্বাচনী এলাকা পুননির্ধারণে নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করণ।
সেপ্টেম্বর : জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমস বিশেজ্ঞদের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত।
ডিসেম্বর : নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের কারিগরি সহায়তায় ৩০০টি আসনের সীমানার খসড়াতালিকা প্রণয়ন।
জানুয়ারি : ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার খসড়া তালিকা প্রকাশ করে দাবি/আপত্তি/সুপারিশ আহবান।
ফেব্রুয়ারি : দাবি/আপত্তির বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক শুনানি শেষে নিষ্পত্তিকরণ।
এপ্রিল : ৩০০টি আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ।
মন্তব্যঃ সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ 35525 বার।