গোলাম আযমের “আমার বাংলাদেশ” নব্য এবি পার্টি?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ | ০৪:১৪ মিঃ, মে ৩, ২০২০
শনিবার (২মে,২০২০) রাজধানীর বিজয়নগরে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ (এবি পার্টি) আত্মপ্রকাশ করেছে। জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী আহ্বায়ক এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে সদস্য সচিব করে ২২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে।
দলটির নাম দেওয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামের সাবেক আমীর যুদ্ধাপরাধী সাজাভুক্ত প্রয়াত গোলাম আযমের একটি বইয়ের নাম থেকে। অধ্যাপক গোলাম আযম বইটি লেখেছিলেন ১৯৯৩ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় জেলে বসে, এবং ১৯৯৫ সালে আধুনিক প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো “আমার বাংলাদেশ”।
বইটির মুখবন্ধে গোলাম আযম লেখেছেন, “৭৩ এর এপ্রিলে লন্ডন পৌছার পর বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা সহজ হয়ে গেলো। কিন্তু তাঁদের সাথে সাক্ষাৎ আলোচনা করার উপায় হিসেবে হজ্জের উপলক্ষটিকেই বাছাই করতে হলো। ৭৭ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর হজ্জের সময় আমি বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হবার উদ্দেশ্যে লন্ডন থেকে সৌদি আরবে হাযীর হতাম। তাঁদের কাছ থেকে দেশের বিস্তারিত অবস্থা, ইসলামী আন্দোলনের গতি- প্রকৃতি ও অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত হয়ে যথাসাধ্য পরামর্শ দিতাম। এর ফলে সশরীরে বিদেশে থাকলেও মন-মগজ ও চিন্তা- চেতনায় আমার জন্মভূমিই স্থায়ী আসন দখল করে রইলো।
৭৫ এর আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে দেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ৭৬ এর জানুয়ারীতে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করলেন যে যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল তারা তা বহাল করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি দু’বার লেখা সত্ত্বেও সরকার তা নামঞ্জুর করলেন। অবশেষে ৭৮ এর জুলাই মাসে ভিসা নিয়েই আসতে বাধ্য হলাম। কয়েক মাস পর সরকার আমাকে দেশ থেকে বের হয়ে যাবার আদেশ দেন। আমি সে আদেশ অমান্য করেই দেশে রয়ে গেলাম। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে দেশ থেকে বের করবার কোন আইনগত পথ না থাকায় সরকার চুপ করে থাকতে বাধ্য হলেন।
৭৮ এ দেশে আসার পর পরই সর্বপ্রথম ‘বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন’ নামে বইটি লিখি। পরবর্তী সংস্করণে বইটি ‘ইসলামী ঐক্য ইসলামী আন্দোলন’ নামে প্রকাশিত হবার পর এ নামেই বহু সংস্করন বের হয়েছে। দেশের ইসলামী শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে একটি ব্যাপক ভিত্তিক ইসলামী আন্দোলন গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য ছিল। এ বইটিতে প্রমান করা হয়েছে যে, মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, ওয়াজ এবং তাবলীগের মাধ্যমে ইসলামের দ্বীনের যথেষ্ট খেদমত হচ্ছে। কিন্তু শুধু খেদমতে দ্বীনের দ্বারাই ইসলামের বিজয় হতে পারেনা। তাই ইকামতে দ্বীনের জন্য এর উপযোগী কর্মসূচী এবং পরিকল্পনা প্রয়োজন ও জামায়াতে ইসলামী সে মহান লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে।”
নতুন এই দলের নামকরণ খুঁজতেই আমি একটু আগে বইটি পড়েছি। যেহেতু আমি রাজনীতি নিয়ে গবেষনা করি তাই কোন বই থেকে নোট দেওয়ার আগে বইটি ভালো করে অবজারভেশন করতে হয় তাই আমি বই থেকে এটাই অনুধাবন করলাম যে, খুব সহজ ভাবে ঠান্ডামাথায় তিনি বইটি লেখেছেন। রাজনীতির ইতিহাস ঘাটলে আপনি দেখতে পাবেন যত পটপরিবর্তন হয়েছে তার বেশির ভাই ই জেল থেকে। আর গোলাম আজমও সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। গোলাম আজমের জেলকে পুজি করে নব্য এই দলটিও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সমর্থন আদায় করতেই এই নাম মনোনয়ন করে থাকতে পারেন।
আসুন আমরা গোলাম আযম সম্পর্কে একটু জেনে আসি। গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন, ঢাকসুর এজিএস এবং জিএস পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তাবলীগ জামায়াত করতেন, রংপুর জেলার আমিরও ছিলেন।
১৯৫৪ সালের এপ্রিলে জামায়াতে ইসলামীতে সহযোগী হিসেবে যোগদান করার পর ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হয়ে রংপুর কারাগারে অবস্থানকালেই জামায়াতের রুকন হন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। এর এক বছর পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এবং রাজশাহী বিভাগীয় আমীরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৫৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক পদ গ্রহণ করেন।
১৯৬৪ সালে আইয়ুব খান সরকার বিরোধীতার জন্য মৌলবাদী ধর্মীয় কাজকর্মের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ও গোলাম আযম গ্রেফতার হন। তাকে আট মাস আটক করে রাখা হয়। পাকিস্তান সময়েও জামাতে ইসলামী নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিলো। বাংলাদেশেও বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসাবে নিষিদ্ধ।
১৯৬৯ সালে গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর পদে অধিষ্ঠিত হন এবং এই পদে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে বিরধীতা করেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের শেষ দিকে তিনি পাকিস্তানে চলে যান।
বাংলাদেশে স্বাধীন হবার পরে গোলাম আযম পাকিস্তান থেকে লন্ডনে চলে যান এবং ১৯৭৮ সালে তিনি পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশের সল্পমেয়াদী ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে কোন প্রকার বৈধ ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে অবস্থান করেন এবং তার জন্মসূত্রে এদেশে থাকার অধিকার রয়েছে বলে দেশত্যাগে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তীতে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসাবে রাজনীতি করতে থাকেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি জামায়াতের আমির পদে ছিলেন। ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন এবং ২০১৩ সালে তিনি ৯০ বছরের কারাবরণ শাস্তি অবস্থায় ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে মৃত্যু বরণ করেন।
আমার পাঠকরা ভাবতে পারেন আমি কেনো গোলাম আযমের জীবনী তুলে ধরছি। আমি আসলে তার রাজনৈতিক ব্যাখা তুলে ধরার আগে তার সম্পর্কে জাতিকে জানিয়ে দিতে চাই, যে যুদ্ধাপরাধী ব্যাক্তির এই দেশে নাগরিকত্ব ছিলোনা সেই ব্যাক্তিই ৯১ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, দলকে বিজয়ী করেছেন ২০ টি আসনে। নাগরিকত্ব পাবার পরে ৯৬ সালের নির্বাচনে মাত্র ৩ টি আসন পেলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৭ টি আসনে জয়ী হয়ে দুই জনকে মন্ত্রীও করে ছিলেন।
রাজনৈতিক গুরুত্বর দিক থেকে জামায়াত দেশের ৪র্থ বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দেশের নাগরিত্ব না থাকার পরেও যে ব্যাক্তি রাজনীতি চালিয়ে গিয়েছেন সেই ব্যাক্তির উত্তরসরীরা যে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন আরো শক্তিশালী হয়েছে এই কথা অমূলক নয়। অমূলক নয় বলেই “আমার বাংলাদেশ পার্টির” জন্ম হলো বিশ্ব রাজনীতির এক চরম অবস্থায় যখন বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর মতন একটি দূযোর্গ চলছে। বিশ্ব রাজনীতির পট পরিবর্তনে আমেরিকা ও চীনের অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলি যে রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে তারই নিরিখে বাংলাদেশের নতুন এই দল বর্তমান সরকারের জন্য যেমন একটি অস্বস্তিকর, অনুরুপ ভাবে দেশ ও রাজনৈতিক স্থীতিশীলতার জন্য নতুন এইদলকে স্বাগত না জানানোর কোন বিকল্প সরকারের নেই। সরকার বা আওয়ামী লীগের জোটের মিত্ররা যদি মনে করেন নতুন এই দলকে প্রশাসন দিয়ে রুখতে হবে তাহলে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা রাজনৈতক দূরদর্শিতায় আবারো ভুল করবে বরং তাদের রাজনৈতিক শক্তি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। নইলে অতিতের মতন পটপরিবর্তন হবার সম্ভাবনা সৃস্টি হতে পারে।
বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভাল না থাকলেও দেশের শাষন ব্যবস্থা অতীতের যে কোন সময়ের থেকে ভালো। কিন্তু রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যদি শক্ত রাজনৈতিক দল না থাকে তাহলে সেই দেশের অবস্থা ঠিক কলার গাচের মাঞ্জেপোকা খেকো গাছ মনে হয়। জাতিয় পার্টি যেমন আ স ম রবকে গৃহপালিত বিরধী দল করে রেখেছিলো। এখন আওয়ামী লীগ জাতিয় পার্টিকে ঠিক একই ভাবে গৃহপালিত বিরধী দল করে রেখেছে। এখন কথা হলো আওয়ামী লীগ দল হিসাবে কতটা সাংগঠনিক বা সংগঠিত। সাম্প্রতিক কালে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ছাড়া পদস্থ প্রায় অধিকাংশ নেতা জনসমর্থন হারিয়েছেন। একজন ব্যাক্তির ইমেজ দিয়ে একটি দল কতদিন ঠিকে থাকতে পারে ? সম্ভবত শেখ হাসিনার অবর্তমানে বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার যেমন দেশের উন্নয়ন করেছে ঠিক তেমনি জনগনের কাছে বিরাগভাজন হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা তাদের যোগ্য উত্তরসূরী তৈরী হয়নি। গত নির্বাচনে একটি প্রশ্ন টপচার্টে ছিলো বিএনপি বা তাদের মিত্র যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? বিএনপি ও তাদের মিত্ররা যেমন বলতে পারেননি, তেমনি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও অনুমান করতে পারেনি। ঠিক একই ভাবে শেখ হাসিনার অবর্তমানে আওয়ামী লীগের হাল কে ধরবে এই প্রশ্ন এখন ছুড়ে দিলে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরাই সঠিক উত্তর দিতে পারবেন না।
একটি দেশের যে দলই ক্ষমতায় আসুক, সবার আগে দেখতে হয় সেই দেশের জনগন যেন ভালো থাকে। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে রাজনৈতিক চাপে থাকা দেশ এই মুর্তূতে বাংলাদেশ। পাশের দেশ ভারত ও পাকিস্তানে যে ভাবে ক্ষমতার পালাবদলের হাওয়া কয়েক বছর যাবত হচ্ছে সেই তুলনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনটা একটু ভিন্ন আঙ্গিক ই। পাকিস্তানে যখন একের পর এক রাজনৈত দল দেশ চালাতে ব্যার্থ হলেন তখনই ক্রিকেটার ইমরান খানের নতুন দল ক্ষমতায় আসলেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাঠ পর্যায়ে বিএনপির কর্মী ও সমর্থক থাকলেও নেতা নেই, জাতীয় পর্যায়ে তাদের নেতৃত্ব শূণ্যের কোঠায়, যে কয়জন আছেন তারাও বৃদ্ধ প্রায়। অপর দিকে আওয়ামী লীগের ফটোসেশন নেতা অনেক আছে, কিন্তু প্রগতীশিল, দক্ষ ও শিক্ষিত নেতার অভাব সবচেয়ে বেশি। হাইব্রীড ও বির্তকীত নেতা দিয়ে চলছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় অনেক নেতা জনগনের আস্থা অর্জন করতে পারলেও স্থানীয় নেতাদের প্রতি জনগন অতিষ্ঠি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের দলে মেধাবী নেতৃত্ব সৃস্টি করতে যেমন ব্যার্থ হয়েছেন তেমনি বামধারার মেধাবী নেতৃত্ববৃন্দ জনগন থেকে দূরে থাকার কারণে জনসমর্থন অজর্ন করতে অনেকটাই ব্যার্থ। সেই সুযোগে জামায়াত ভিতরে ভিতরে নিজেদের সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করে থাকতে পারেন বলে রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারনা। জামায়াত যদি সংগঠিত না হতে পারেন তাহলে দল হিসাবে তারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে তাই জামায়াত নিজেদের সর্বো শক্তি দিয়ে নতুন দলকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করবে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার হঠকারিতা সিদ্ধান্তর চরম মূল্য দিতে হবে আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদেরকে যতই বলুক রাজনৈতিক দল হিসাবে তারা যথেষ্ট ক্ষমতাবান প্রকৃতি পক্ষে এই দুই দলের ই অবস্থা এখন বয়েসে নুড়ে পড়ার মতন। বিশেষত কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে দুটি দলেরই ব্যার্থতা দেশের যুব শ্রেনির মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি করেছে। তাই দেশের সবচেয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যদি এখনি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি না করে তাহলে খুব শিঘ্রই অন্যদল এগিয়ে যাবে অথবা নতুন নতুন দলের সৃস্টি হবে। পুরাতন দলের মধ্যে জাতিয় পার্টি যদি নিজেদের ঐক্য ধরে রাখতে পারে তাহলে আগামিতে তারাও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দাঁড়াতে পারে। সচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেই আর একক ভাবে সরকার গঠন করা সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, গত জাতীয় নির্বাচনে তরুন সমাজ বয়কট করেছে। কোন জাতির একটা বিশেষ শ্রেনি যখন মুখ ফিরিয়ে নেয়, সেই জাতি খুব বেশিদিন ঠিকে থাকতে পারেন না। গোলাম আজম ৭৩ থেকে ৭৫ পর্যন্ত দুই বছর চেষ্টা করলেন দেশে আসার কিন্তু ব্যার্থ হলেন, ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু শহীদ হলেন। ঠিক তিন বছর পর ৭৮ সালে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসলেন। তার ৩ বছর পরে জিয়াউর রহমান শহীদ গেলেন। তার ৯ বছর পরে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে গোলাম আজমের দল ২০ টি আসনে জয়যুক্ত হলেন। যেহেতু গোলাম আজমের নাগরিকত্ব নেই সেহেতু তিনি নির্বাচনে অংশগ্রণ করতে পারেননি। কিন্তু ঠিক ই দলকে বিজয়ী করলেন।
৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচন বয়কট করে জামায়াতও। বিএনপি ক্ষমতায় থাকে মাত্র কয়েক মাস। ৭ ম সংসদ নির্বাচনে জামায়াত মাত্র ৩ টি আসন পায়। ৮ম সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ১৭ টি আসনে জয়যুক্ত হয়ে দুই জন মন্ত্রী (মতিউর রহমান নিযামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, দুইজনের ই যুদ্ধাপরাধী মামালায় ফাসি কার্যকর হয়েছে) ও অর্জন করলেন।
ওয়ান এলেভেনের পরে ৯ম সংসদ নির্বাচনে জামায়াত আবারো বিএনপির সাথে জোট ভুক্ত হয়ে নির্বাচন করে এবং জামায়াত মাত্র ২ টি আসনে জয়যুক্ত হয়। ১০ তম সংসদ নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি বয়কট করে। ১১ তম সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হায়ায়, বিএনপির নমিনেশন নিয়ে জামায়াত ২৫ জন প্রার্থীদেয়, কিন্তু কোন আসনেই জামায়াত বিজয়ী হতে পারেনি।
নিবন্ধন হারানোর পরপরই শুনা যাচ্ছিলো জামায়াত নতুন দল গঠন করবেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু’র ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ” ঘোষনার পর থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলো জামায়াতের সংস্কার পন্থী ও বহিস্কার নেতাদের দ্বারা গঠিত দল আসলে নিবন্ধন নেওয়ার জন্যই নতুন খোলষ ধারণ করবে। অবশেষ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর সাবকে আমির যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বইয়ের নামে যে দল গঠিত হলো সেই দল যে জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না তা বলা যায়না।
বাংলাদেশের যে কোন নাগরিকের রাজনৈতিক দল করার অধিকার আছে সেই সূত্রে জামায়াত যদি নতুন দল গঠন করে এবং বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালা বদল করে তাহলে যেমন অবাক হওয়ার কিছু নেই, তেমনি জামায়াতের পূর্ব ইতিহাস থেকে নব্য জামায়াতকে (আমার বাংলাদেশ পার্টি - এবি পার্টি) বিশ্বাস করারও কিছু নাই।
লেখক:
সহকারী সম্পাদক, দ্য পার্লামেন্ট ফেইস,
সংসদ ও রাজনীতি গবেষক, সাংবাদিক
মন্তব্যঃ সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ 17544 বার।