ডিজিটাল আইন ৩২ ধারা কি বলছে

সাব্বিন হাসান | ১১:০৭ মিঃ, জুলাই ১৫, ২০১৮



মন্ত্রিসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদিত। সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছর জেল। আর অর্থদন্ড- কোটি টাকা। ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করা যাবে না। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে অরাজকতা করলেই সাজা। সরকারি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ করে গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ধারণ ‘গুপ্তচরবৃত্তি র অপরাধ বলে গণ্য।

 সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড- আর ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

 আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে নতুন আইনে একে ভিন্ন আঙ্গিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি দফতর থেকে গোপনে তথ্য-উপাত্ত নেওয়া বা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদ- এবং ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের  বিধান রাখা হয়েছে। অনুমোদিত আইনের ২০, ২৫, ২৯ ও ৪৮ নম্বর ধারা হচ্ছে অ-আমলযোগ্য জামিনযোগ্য। আর ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ ধারা হচ্ছে আমলযোগ্য এবং জামিন-অযোগ্য।

 মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, নতুন আইন জাতীয় সংসদে পাস হলে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ এবং ৬৬ ধারা বিলুপ্ত হবে। নতুন আইনে অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এ আইনে জামিনযোগ্য ও জামিন-অযোগ্য বেশকিছু ধারা আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (প্রস্তাবিত) সংজ্ঞা, ডিজিটাল আইন ৩২ ধারা কী বলছে! সাব্বিন হাসান নতুন আইনের ৩২ ধারা আইসিটি আইনের ৫৭ ধারারই পুনরাবৃত্তি কি না? এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে কোথাও সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়নি। গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়ে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে বিস্তারিত আছে। আর গুপ্তচরবৃত্তিটা বেশ কঠিন একটা বিষয়। প্রতিবেদন ৮ দ্য পার্লামেন্ট ফেইস ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন, ইমারজেন্সি কম্পিউটার রেসপন্স টিম গঠন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে।

 নতুন আইনের বিভিন্ন ধারার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এ আইনের ১৭ থেকে ৩৮ পর্যন্ত অনেক ধারায় ডিজিটাল বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। প্রস্তাবিত আইনের ২১ ধারায় স্পষ্ট করে বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা বা প্রচারণা চালান বা এতে মদদদান করেন তাহলে ১৪ বছরের জেল ও ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেওয়ার বিধান আছে।

সাইবার অপরাধী

 সাইবার সন্ত্রাসের বিষয়ে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা এবং জনগণ বা এর কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করার অভিপ্রায়ে কোনো কম্পিউটার বা কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা কোনো ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বা বেআইনি প্রবেশ করেন বা করান তাহলে ওই ব্যক্তি সাইবার অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য হবেন। এ অপরাধের জন্য ১৪ বছরের কারাদন্ড- বা ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দন্ডিত হবেন।

 আইনের ৩২ ধারা কী বলে..

 যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের গোপনীয় বা অতিগোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে গোপনে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ জন্য ১৪ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা আছে।

 নতুন আইনের ৩২ ধারা আইসিটি আইনের ৫৭ ধারারই পুনরাবৃত্তি কি-না? এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে কোথাও সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়নি। গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়ে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে বিস্তারিত আছে। আর গুপ্তচরবৃত্তিটা বেশ কঠিন একটা বিষয়।

 ইতিপূর্বে ৫৭ ধারা যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই আইন (৫৭ ধারা) বাতিল হয়নি ধরে নিয়ে মামলার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬২ ধারায় উল্লেখ আছে, আইসিটি অ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ এবং ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে।

 আইনে ৫৭ ধারায় কী ছিল..

৫৭ ধারায় সবকিছু ছোট এবং সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা ছিল। এ আইনে যেটা যে প্রকৃতির অপরাধ সেই আঙ্গিকে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তদন্ত কীভাবে করা হবে, তা বিস্তারিত বলা হয়েছে। যা আগে ছিল না। প্রস্তাবিত আইনের ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, না জানিয়ে কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করলে পাঁচ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।

 আমি গুপ্তচর’

 এই ধারাটি আইনে পরিণত হলে বাংলাদেশে সবচেয়ে চাপের মুখে পড়বে সাংবাদিকতা। বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। এমন প্রশ্ন তুলে এই আইনের প্রতিবাদে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা ‘আমি গুপ্তচর’ নামে একটি হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইনও শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

 কী বলেছেন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ

 এই আইনের বিপক্ষে অবস্থান নেয় বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ। প্রসঙ্গত, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সম্পাদক পরিষদ এক বিবৃতিতে জানায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের হয়রানিমূলক ৫৭ ধারা বাতিল করে ওই ধারার বিতর্কিত বিষয়গুলো প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রেখে দেওয়া। পাশাপাশি আরও নতুন কয়েকটি কঠোর ধারা সংযোজন করায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা অবিলম্বে ৫৭ ধারাসহ আইসিটি আইনের বিতর্কিত সব ধারা বাতিল এবং প্রস্তাবিত নতুন আইনে যুক্ত ৩২ ধারাসহ বিতর্কিত ৯ দ্য পার্লামেন্ট ফেইস ধারাসমূহ খসড়া থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

 সম্পাদক পরিষদ মনে করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি প্রসঙ্গে অপরাধের ধরন ও শাস্তির যে বিধান রাখা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনা এবং বাকস্বাধীনতায় আঘাত করবে। একই সঙ্গে তা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করবে। প্রস্তাবিত এ আইনে কেউ কোনো সরকারি সংস্থার গোপনীয় তথ্য কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ করলে তা কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি বলে সাব্যস্ত করে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ আইন আরও কঠোর। এটি মুক্ত সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিসরকেও সংকুচিত করবে। তাই তাড়াহুড়ো না করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি চূড়ান্ত করার দাবি জানায় সম্পাদক পরিষদ।

 আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বনাম ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা

(১ উপ-ধারা): কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথ বা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদি কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।

 (২) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক ১৪ বছর এবং ন্যূনতম ৭ বছর কারাদন্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন।

 সাংবাদিকেরা তো সহজে তথ্য পায় না’

 ৫৭ ধারায় মানহানি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর মতো বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তাই এর অপপ্রয়োগের সুযোগ ছিল এবং অপপ্রয়োগ হয়েছে। বিশেষ করে প্রভাবশালীরা এই আইনটি সাংবাদিকদের হয়রানিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছেন। সাধারণ মানুষও হয়রানির শিকার হয়েছেন।

 বিশ্লেষকেরা বলছেন

 ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা আরও অনেক কঠোর। এই আইন কার্যকর হলে সাংবাদিকেরা যেসব বাধার মুখে পড়তে পারেন তা হলো:

 ১. সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থায় গিয়ে সাংবাদিকেরা ঘুষ-দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে পারবেন না।

 ২. ঘুষ-দুর্নীতির কোনো দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবেন না।

 ৩. এসব অবৈধ কাজের কোনো ভিডিও বা অডিও করতে পারবেন না।

 ৪. কোনো ডকুমেন্ট, ভিডিও, অডিও সংগ্রহ বা ধারণ করলেও তা প্রকাশ করতে পারবেন না।

 যদি সাংবাদিকরা বৈধ অনুমতি না নিয়ে এসব করেন, তাহলে তারা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দায়ী হতে পারেন। সাধারণ মানুষও আর ঘুষ দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন না। তাঁরা ঘুষ দিতে বাধ্য হলেও, তার কোনো প্রমাণ বা ডকুমেন্ট প্রকাশ করলে এই আইনের শিকার হতে পারেন। ইতিপূর্বে ৫৭ ধারা যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই আইন (৫৭ ধারা) বাতিল হয়নি ধরে নিয়ে মামলার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬২ ধারায় উল্লেখ আছে, আইসিটি অ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ এবং ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে। ১০ দ্য পার্লামেন্ট ফেইস এতে শুধু সাংবাদিকরা নন, সাংবাদিকদের যাঁরা তথ্য দেন তাঁরাও বিপাকে পড়বেন। শুধু অনুসন্ধানী নয়, প্রতিবেদন তৈরি করতেও সাংবাদিকরা তো সহজে তথ্য পায় না। তাকে কোনো-না-কোনোভাবে সোর্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি গোপন তথ্য পুলিশ সদর দপ্তর বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাওয়া যেতে পারে। এখন সেই খবর প্রকাশের পর যদি সোর্স প্রকাশ করতে হয়, তাহলে তো আর তথ্য পাওয়া যাবে না। সাংবাদিকতা কঠিন হয়ে যাবে। সঠিক এবং তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন করতে হলে তো নানা কৌশলে সঠিক তথ্য নিতেই হবে।

 ৩২ ধারা ছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বিষয়গুলো নতুন ডিজিটাল আইনের খসড়ার ১৯ ধারায় প্রায় একইভাবে রাখা হয়েছে। তাতে বলা হয়:

 (১) কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে দন্ডবিধি ( ১৮৬০ সালের ৪৫ নম্বর আইন)-এর ৪৯৯ ধারা মতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মানহানি ঘটায়, তাহা হইবে একটি অপরাধ।

 (২) কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কোনো কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা বা অশ্লীল এবং যাহা মানুষের মনকে বিকৃত ও দূষিত করে, মর্যাদাহানি ঘটায় বা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে, তাহা হইলে ইহা হইবে একটি অপরাধ।

(৩) কোনো ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোনো ব্যক্তির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানিবার অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্পচার করেন, যাহা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পাঠ করিলে বা দেখিলে বা শুনিলে তাহার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে, তাহা হইলে ইহা হইবে একটি অপরাধ।

 আইনজ্ঞরা কী বলছেন

২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এই আইনটির অনুমোদন পায়। সেদিন মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, আইনটির প্রাথমিক খসড়া তৈরির সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। কিন্তু আমরা যে প্রস্তাব করেছিলাম তার সঙ্গে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া আইনের অনেক পার্থক্য। এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে নতুন ডিজিটাল আইনে বিতর্কিত তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নতুন আইনের ১৮ এবং ১৯ ধারায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ৩২ ধারায় যে বিধান রাখা হয়েছে তাতে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র এবং স্বাধীনতা আরও সংকুচিত হবে।

বিনা অনুমতিতে অফিসে ঢুকে কেউ যদি তথ্য নেয়, সেজন্য অন্য আইন আছে। কেউ যদি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ফাইল পাচার করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করে, তার জন্য অফিসিয়িাল সিক্রেটস অ্যাক্ট আছে। কিন্তু নতুন আইনে আবার তা ঢোকানো হয়েছে। কোনো সাংবাদিক ‘স্টিং অপারেশন’ কেন চালায়। ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করতে। এই আইনের ফলে তা আর পারা যাবে না।

অন্যদিকে সাধারণ মানুষ যদি কোনো সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়, আর তা যদি সে তার মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করে আনে, তা প্রকাশ করতে পারবে না। ঘুষ খেলেও তার তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। তাহলে পরিস্থিতি কী দাড়াবে? এটা সুশাসনের পথে বাধা। আর সাংবাদিকতা সত্যিই অসুবিধার মুখে পড়বে।

 আইনমন্ত্রীর বক্তব্য

 ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা নিয়ে এরই মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদমাধ্যমে একাধিবার কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য প্রকাশে এই আইন কোনো বাধা হবে না। সাংবাদিকদের স্বাধীন সাংবাদিকতার ব্যাপারেও বাধা হবে না। এই আইনে কোনো সাংবাদিক মামলা বা হয়রানির মুখে পড়লে তাদের মামলা তিনি বিনা খরচে লড়বেন।

 জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ৩২ ধারায় অপরাধ, বিশেষ করে গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়টি আনা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে এই অপরাধের আওতা এবং শাস্তির বিধান আছে। এ আইনে দেশের মানুষ হয়রানির শিকার হবে। তাদের বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হবে। এই আইনটি সবচেয়ে চাপের মুখে ফেলবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে। সাংবাদিকরা অনেক দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধান করেন গোপনে, অগোচরে।

 অনুমতি নিয়ে তো আর দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধান হয় না। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিসহ বিশ্বের অনেক দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধান সাংবাদিকেরা গোপনেই করেছেন। তাই বাংলাদেশে এই আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে যেমন বাধাগ্রস্ত করবে, তেমনি দুর্নীতি-অনিয়মকে উৎসাহিত করবে। আইনটি পাশের আগে তাই সরকারকে আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখার অনুরোধ রাখেন।

মন্তব্যঃ সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ 17992 বার।





এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

০৮:৩৩ মিঃ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯

দোহার পৌরসভার ভোট স্থগিত

সর্বশেষ আপডেট

মিথ্যাচার বিএনপির একমাত্র সম্বল : ওবায়দুল কাদের প্রস্তাবিত বাজেট সার্বিকভাবে গ্রামীণবান্ধব : পরিকল্পনামন্ত্রী ভারতের ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সাথে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র এবং মানব সম্পদ মন্ত্রীর বৈঠক দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম রোমানিয়ায় রাজা তৃতীয় চার্লস যারা থাকছেন এরদোগানের শপথ অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত বাজেট দেশের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠার বাজেট : হানিফ অজাতশত্রু আফছারুল আমীনের মৃত্যু দলের জন্য ক্ষতি: হাছান মাহমুদ ইউক্রেনে রাশিয়ার জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী পুতিন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আলোচনা প্রত্যাখান দুর্ভাগ্যজনক : মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেত্রকোনা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুন্নেছা আশরাফের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক এরদোগানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তুরস্ক গেলেন রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার হাসিনা ও এরদোয়ানের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্থনীতি প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে : স্পিকার শিশু কল্যাণ বোর্ড শিশুদের উন্নয়নে কাজ করবে : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সামরিক জোটের আধুনিকায়নে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান লাতিন আমেরিকায় ডলার বাদ দিয়ে অভিন্ন মুদ্রা চালুর প্রস্তাব মার্কিন ভিসা নীতির পরও বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি : তথ্যমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে ফারুকের ভূমিকা অবিস্মরণীয় : প্রধানমন্ত্রী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান শপথ নেবেন ৩ জুন