পরিবর্তিত বাংলাদেশ
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন | ০৮:০৮ মিঃ, অক্টোবর ১, ২০২৪
৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের অবস্থা কেমন? প্রশ্নটা সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। ১৫ বছরের জঞ্জালতো আর এক দুই দিনে সাফ করা যাবেনা। কিছুটা সময়তো লাগবেই। হয়তো অনেক পরিবর্তনই হবে। হয়তো আগা পাস্তলাই বদলে যাবে বাংলাদেশ। আমরা দেখতে পাবো নতুন এক বাংলাদেশ, যে দেশের স্বপ্ন দেখছে আমাদের নতুন প্রজন্ম।
সন্ত্রাস দুর্নীতি ঘুষ রাহাজানী মুক্ত এক বাংলাদেশ আমাদের সবার কাম্য। দুবেলা দুমুঠো ডাল ভাত শান্তিতে খেতে পারলেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ খুশি। এদেশের সাধারণ মানুষ রাজনীতি অর্থনীতি ও কূটনীতির অতসব মারপ্যাঁচ বুঝেনা। তারা চিনে সহজ সরল জীবন যাপন। জীবনের সব জটিলতা কুটিলতা দূর হলেই মানুষ খুশি। তারা কোনো ‘আয়না ঘর’ কিংবা অন্য কোনো নামে বানানো কোনো টর্চার সেল দেখতে চায়না। খেয়ে পরে মনের কথা নির্ভয়ে বলে জীবনটা কাটাতে পারলেই চলে।
বর্তমান অন্তর্বতী সরকার হয়তো সে চেষ্টাই করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় বিদেশি বিভিন্ন মিশনের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সং¯’ার প্রতিনিধিদের সাথে সম্প্রতি বলেছেন, এমন একটি সময়ে এসে দেশের দায়িত্ব নিয়েছি, যখন প্রায় সবক্ষেত্রেই চরম বিশৃঙ্খলা। তাই নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সর্বজনগ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করবে।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে এ কথা পরিস্কার যে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, সর্বজনগ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। গত ১৫ বছর ধরে মানুষ যেরকম নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে, আশা করা যায় সেরকম নির্বাচন হবে। মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেয়ে অন্তত নিজের ভোটটা পছন্দমতো প্রার্থীকে দিতে পারবে।
দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকারের বাইরে থেকে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভোট দানের কথা বলা যায় ভুলেই গেছে। কেন্দ্র থেকে ভোট না দিয়ে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা কম বেশি আমাদের সবারই আছে। মনের যন্ত্রনা মনে নিয়ে ভোট না দিয়ে ফিরে আসার সেই দুঃসহ বেদনা মানুষ আজও ভুলতে পারছেনা। অন্তর্বর্তী সরকার যদি মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে পারে তাহলেই সবাই খুশি।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চাহিদা খুব বেশিনা। তারা শান্তিতে তিনবেলা পেটপুরে খেয়ে নিশ্চিন্ত ঘুমুতে পারলেই আনন্দিত। আশা করা যায় বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মানুষের এই চাহিদাটি পূরণ করতে পারবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যদি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, আইন শৃঙ্খলা পরি¯ি’তি যদি উন্নত হয় তাহলে একটা দেশ তড়তড় করে চলে। বিষয় দুটোই বেশ চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জ অবশ্যই নিতে হবে বর্তমান সরকারকে।
বিগত সরকার যেসব ভুল করেছে এবং সাধারণ মানুষের সাথে যেসব অমার্জনীয় আচরণ করেছে তার কথা মনে হলে মানুষ ভয়ে কুঁকড়ে যায়। এই রকম দৃশ্য মানুষ কল্পনাও করতে চায়না। বিষয়টি মাথায় রেখেই বর্তমান সরকারকে পা ফেলতে হবে। অবশ্য এই সরকার তাই করছে। বেশ ভেবে চিন্তে নি”েছ প্রতিটা পদক্ষেপ। প্রাথমিকভাবে তারা সমস্যা চিহ্নিত করছে। পরে এক এক করে সমাধান করবে। সব সমস্যার সমাধান একসাথে করা যাবেনা। দীর্ঘদিনের জমানো সংকট থেকে এক নিমিষেই উত্তরণ ঘটানো যাবেনা। ধীরে ধীরে করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক ব্যাপার আছে। সবকিছু মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
একটা রাজনৈতিক সরকার হুটহাট এটা সেটা করে ফেলতে পারে। রাজনীতির বাইরের সরকার তা পারেনা। তাছাড়া যে কোনো কিছু ভেবে চিন্তে করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
গত সরকারের পতনের পিছনে কি কি কারণ ছিলো বা আছে তার পুংখানো পুংখ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে পথ চলতে পারলেই বিপদ কম হবে। অনেকটা পুলসেরাত পুল পাড় হবার মতো। একটু পা ফসকালেই সব শেষ।
ইতোমধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি বেশ জটিল। কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার আগে করতে হবে আর কোন কোন ক্ষেত্রে পরে করতে হবে বা কোন সংস্কার বেশি জরুরি তা চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই করছে বর্তমান সরকার। খুব মেপে মেপে পা ফেলে করতে হ”েছ কাজটি। দ্রæততার সাথে করতে গেলে বা এক সাথে অনেক কাজ করতে গেলে ভুল হবার আশঙ্কা আছে। সেই ঝুঁকিনেয়া যাবেনা। একটা ভুল হয়ে গেলে সে ভুল শুধরানোর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বেশ আশাবাদি। তারা আশায় বুক বেঁধে আছে। দীর্ঘদিনের জগদ্দল পাথরের চাপা থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষ স্ব¯ি’র নিঃশ^াস নি”েছ। সামনে আরো আরামদায়ক নিঃশ^াস নেয়ার জন্য দিন গুনছে। নিশ্চই তারা নিরাশ হবেনা।
দীর্ঘ ১৫/২০ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে বেশ ক’বছর লাগবে। সেই সময়টা অন্তর্বর্তী সরকারকে দিতে হবে। মানুষ সে সময়টা দিতে মানসিকভাবে তৈরি আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারটা ঠিক এখনই বোঝা যা”েছনা। তবে বেশি তাড়াহুড়ো করলে ফলাফল আশানুরুপ না হবার আশঙ্কা আছে।
দীর্ঘ দিন মানুষ নির্বাচনের বাইরে থাকার কারণে ‘নির্বাচনী পরিবেশ’ শব্দটা থেকে বি”িছন্ন। আগে এই শব্দটার সাথে যোগাযোগ ¯’াপন করতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মানুষ যেন নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে সে ব্যব¯’া করতে হবে। তারপর নির্বাচন। অতসব কাজ করার জন্য দুই তিন মাস কোনো সময় না। অনন্ত তিন চার বছর লাগবে। সে সময় পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশের কল্যাণ যারা কামনা করে তারা অবশ্যই ধৈর্য্য ধারণ করবে। কারণ তারা জানে সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। সময়ের আগেও করা যায়না পরেও না। আগে করলে কাজে সফলতা আসার সম্ভাবনা কম। পরে করলে দেশের মানুষ বিরক্ত হয়। উভয় বিষয় মাথায় রেখেই অন্তর্বর্তী সরকারকে পথ চলতে হবে।
বিগত সরকারের যারা দেশটাকে অন্তঃসার শূণ্য করেছে তাদেরকে যেমন শাস্তির আওতায় আনতে হবে তেমনি সাধারণ নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টা চিন্তা করতে হবে বর্তমান সরকারকে। একটা কাজ করতে যেয়ে যেন আরেক কাজের প্রতি অবহেলা না করা হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।
‘সিন্ডিকেট’ আর ‘চাঁদাবাজি’ নামক যে শব্দ দুটির কারণে মানুষের জীবন কালা কালা যে শব্দগুলো বাংলাদেশ থেকে চিরতরে নির্মূল করতে পারলেই কেবল দেশের মানুষ শান্তি স্বস্তি পাবে। বলা হ”েছ সিন্ডিকেট আর চাঁদাবাজির যারা হোতা তাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে সে আশা মানুষ করতেই পারে।
বলা যায় বিগত সরকার বাংলাদেশের মানুষের প্রতি একটা বড় অবিচার করেছিলো। নিজের মতো করে গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারন করে মানুষের জীবন তছনছ করে দিয়েছিলো। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাসের সর্বনি¤œ ভাড়া পাঁচ টাকা করে ছিলেন। কিছু দিন পরেই সর্বনি¤œ ভাড়া দশ টাকা হয়ে যায়। এখনও তা বহাল আছে। মানে একজন মানুষ বাসে ওঠে একশ গজ দূর নেমে গেলেই দশ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এ কেমন আজব কথা?
পৃথিবীর অনেক দেশে সর্বনি¤œ ভাড়া আছে, তা হলো কিলোমিটার প্রতি। আমাদের পাশের দেশ ভারতে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া চল্লিশ পয়সা বা কম বেশি। সর্বনিন্মভাড়া দশ টাকা করার কারণে সবরকম পরিবহন ভাড়ায় প্রচন্ড বিরোপ প্রতিক্রিয়া হয়। নিত্যপণ্যের দাম হুহু করে বেড়ে যায়।
কৃষক যে আলু বা টমেটো প্রতি কেজি বিক্রি করে মাত্র দশ টাকায় তা রাজধানী ঢাকায় বিক্রি হয় একশ টাকায়। এর মূল কারণ পরিবহনের অস্বাভাবিক ভাড়া আর ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি।
সর্বনি¤œ ভাড়ার অপশন তুলে দিলে জনমনে শান্তি স্বস্তি ফিরে আসবে।পরিবহনের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিলে মানুষ বড় একটা অনিয়ম থেকে মুক্তি পাবে। জীবনের অর্ধেক পেরেশানি কমে যাবে। কৃষক যে আলু দশ টাকায় বিক্রি করে শহরের মানুষ সে আলু বড় জোর পনের টাকায় ক্রয় করতে পারবে।
একটামাত্র সমস্যার কারণে শতটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই সর্বনি¤œভাড়ার অপশন তুলে দিলে মানুষের শত সমস্যার সমাধান হবে রাতারাতি। বর্তমান সরকারের কাছে মানুষ এই দাবিটি তালিকার শীর্ষে রেখে উপ¯’াপন করতেই পারে।
বাংলাদেশের মানুষ বেশ আশাবাদি। অন্তর্বর্তী সরকার নিশ্চই তাদেরকে হতাশ করবে না। মানুষ দীর্ঘদিন পর তাদের মনখুলে কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছে। আশা করা যায় এবার তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিও আসবে।
[১০৯০ শব্দ]
[মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন]
সাংবাদিক ও লেখক
২৩.০৯.২০২৪
মন্তব্যঃ সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ 157 বার।