একজন সংসদ সদস্য: নির্লোভ দায়িত্ববোধ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব
দীয়া সিমান্ত | ১২:২৩ মিঃ, জুলাই ২১, ২০১৮
১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে ভারত বর্ষবিভক্ত হয়ে ভারতীয় অধিরাজ্য (বর্তমান ভারতীয় প্রজাতন্ত্র) এবং পাকিস্তান অধিরাজ্য (বর্তমান পাকিস্তান) গঠিত হয়। ১৪আগষ্ট ১৯৪৭ সাল থেকে ২৩ মার্চ ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ শাসন পদ্ধতির অধীনে (যা ব্রিটিশ সংসদের একটি অধিনিয়ম) ছিল।
১৯৪৭ সালের ১৮ই জুলাই এই অধিনিয়মটি রাজকীয় সম্মতিপ্রাপ্ত হয় ও দুটি নতুন দেশ ১৫ আগষ্ট ১৯৪৭-এ এর অধীনস্থ হয়। নতুন সংবিধান প্রণয়ন হওয়া পর্যন্ত ভারতের শেষ সংবিধান “ভারত শাসন আইন ১৯৩৫” কার্যকর থাকার ধারা সন্নিবেষ্ঠিত থাকে। পাকিস্তান শাসনামলে বর্তমান বাংলাদেশ অংশকে ১৯৪৭-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব বঙ্গীয় এবং ১৯৫৫-১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান বলা হতো । ২৩ শে মার্চ ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের নিজস্ব সংবিধান কার্যকর হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান। প্রতিষ্ঠার ৭ বছর পর ১৯৫৪ সালের ৮-১২ই মার্চ এর মধ্যে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক নির্বাচন (Bengal Legisative Election)অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৫৪ সালের ৮-১২ই মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আইনপরিষদ নির্বাচন (বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নামে প্রতিস্থাপিত) অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমা শাসকের বিরুদ্ধে আওয়ামী মুসলিম লীগ-এর নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল, পাকিস্তান খেলাফত পার্টি ও নেজামে ইসলাম পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে “যুক্তফ্র্রন্ট” গঠিত হয়। সেই পূর্ব পাকিস্তান পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে ২১৫টি আসন (স্বতন্ত্র থেকে ৮জন যোগ দিলে আসন সংখ্যা দাড়াঁয় ২২৩টি) পায়। মাওলানা ভাসানীর নেতুত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৪৩টি আসন পায়, একে ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি পায় ৪৮টি আসন, নেজামী ইষলাম পার্টি ১৯টি, গণতন্ত্রী দল ১৩টি, খেলাফতে রব্বানী ১টি, স্বতন্ত্র ৩টি এবং ক্ষমতাশীল মুসলিম লীগ ৯টি আসন লাভ করে (পরবর্তীতে চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত একজন মুসলিম লীগে যোগ দিলে তাদের আসন সংখ্যা দাড়াঁয় ১০টি)। ঐ নির্বাচনে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়েরজন্য ৭২টি আসন সংরক্ষিত ছিল যেখানে শিডিউল কাস্ট ফাউন্ডেশন ২৭টি, কংগ্রেস ২৪টি, যুক্তফ্রন্ট ১৩টি, কমিউনিস্ট পার্টি৪টি, বৌদ্ধ ২টি খ্রিস্টান ১টি ও স্বতন্ত্র ১টি করে আসন পায়।
১৯৫৪ সালের ১০ জানুয়ারী দৈনিক আজাদ পত্রিকার শিরোনাম হয়-যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী নির্বাচন, শনিবারে ১৮জনের নাম ঘোষনা। এবং ঘোষিত নামের তালিকা প্রকাশ এরূপ: আতাউর রহমান খান (ঢাকা সদর মধ্য পশ্চিম), মুনির হোসেন জাহাঙ্গিরী (মুন্সিগঞ্জ মধ্য-পূর্ব), ইউসুফ আলী চৌধুরী (ফরিদপুর সদর উত্তর পশ্চিম), আব্দুল সালাম খান গোপালগঞ্জ উত্তর), শেখ মুজিবুর রহমান (গোপালগঞ্জ দক্ষিণ), কাজি রোকন উদ্দিন আহমদ (ফরিদপুর সদর দক্ষিণ পূর্ব), আদেল উদ্দিন আহমদ(মাদারীপুর দক্ষিণ পশ্চিম), হায়দর আলী মল্লিক (জামালপুর দক্ষিণ), আব্দুল খালেক (যশোর পূর্ব), আজিজুর রহমানখন্দকার (গাইবান্ধা মধ্য), আবু হোসেন সরকার (রংপুর কাম গাইবান্ধা), মিয়া আব্দুল হাফেজ (কুড়িগ্রাম মধ্য), হাতেমআলী খান (টাঙ্গাইল উত্তর), সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দীন হোসেন (কিশোরগঞ্জ দক্ষিণ পূর্ব), নাসির উদ্দিন আহমদ (হবিগঞ্জ মধ্যদক্ষিণ), আনোয়ারা খাতুন (ঢাকা সিটি পশ্চিম মোছলেম মহিলা কেন্দ্র), আবুল হোসেন মিয়া (রংপুর সদর পশ্চিম)। শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট থেকে বিপুল ভোটে বিজয় (১৯৩৬২) অর্জন করে লীগ প্রার্থী অহিদুজ্জামানকে (৯৫৬৯) পরাজিত করেন গোপালগঞ্জ দক্ষিণ আসন থেকে।
১৬ই মে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টটি ছিল এরকম: গতকল্য (শনিবার) প্রাতে গবর্ণমেন্ট হাউসে পূর্ব্ববঙ্গেও আরও ১০জন মন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। ইহাদিগকে লইয়া মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা ১৪জন হইল। গবর্ণমেন্ট হাউসের দরবার হলে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক পবিত্র কোরানশরীফ পাঠ করিয়া অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। চারজন রাজশাহী বিভাগ থেকে লওয়া হইবে বলিয়া প্রধানমন্ত্রী জানান। নবনিযুক্ত মন্ত্রীগণ হলেন: জনাব আতাউর রহমান খান, জনাব ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া), জনাব আব্দুস সালাম খান, জনাব শেখ মুজিবর রহমান, জনাব সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দিন হোসেন (অবিভক্ত বাংলার প্রাক্তন মন্ত্রী), জনাব আবুল মনসুর আহমদ, জনাব হাসেমুদ্দীন আহমেদ, জনাব কফিলুদ্দিন আহামদ চৌধুরী, জনাব আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, জনাব রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী প্রমূখ। উক্ত মন্ত্রিসভায় সর্বকনিষ্ট সদস্য ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান (৩০)।
১৯৫৪ সালের ১৫ই মে শেখ মুজিবকে কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়েরদায়িত্ব দেয়া হয়। ২৯ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে দেয়। ৩০ মে করাচি থেকে ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকেই তাকে আটক করা হয়। ঐ বছর ২৩ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।
এত অল্প বয়সে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পিছনে ছিল তার ব্যক্তিগত মেধাবী শ্রম, বিচক্ষনতা আর নিপীড়িত মানুষকে ভালোবাসা। এই বিশাল হৃদয়ের মানুষটি বঞ্চিত মানুষের পাশে দাড়াঁতে শিখেছেন সেই কিশোর বয়স থেকেই। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও কলিকাতা এছলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে বিএ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। স্কুলজীবন থেকেই তার মধ্যে নেতৃত্বের গুনাবলীর বিকাশ ঘটে। ১৯৩৮ সালে তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি’র মুখ্যমস্ত্রী এ কে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুল পরিদর্শনে এলে শেখ মুজিবর রহমান স্কুলের ছাদ সংস্কার দাবি নিয়ে বিক্ষোভ সংগঠিত করেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৩৯সালে স্কুল জীবন থেকেই। তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের একজনসক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিমছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। সেখানে তিনি একবছরেরমেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকপাশ করার পর কলিকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবংসেখানে সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৩ সালেতিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং বাঙ্গালী মুসলিমনেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন।ঐ বছরই তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিতহন। ১৯৪৪ সালে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় নিখিল বঙ্গমুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সম্মেলনেশেখ মুজিব বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। তিনি কলিকাতায়বসবাসরত ফরিদপুরবাসীদের নিয়ে তৈরী “ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্টএসোসিয়েশন” এর সেক্রেটারী মনোনীত হন। কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যায়ন কালীন সময়ে ১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের বছর কলিকাতা থেকে বিএ. ডিগ্রি লাভ করেন। ভারত পাকিস্তান পৃথক হওয়ার সময় কলিকাতায় ভয়ানক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়, এসময় মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় শরিক হন। রাজনীতিতে তিনি হোসাইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছিলেন। ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবর রহমান মুসলিম লীগ কর্তৃক ফরিদপুর জেলার দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ন্যায্য দাবির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে ১১ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনে প্রধান সংগঠকদের একজন ছিলেন শেখ মুজিব। ১৯৪৮ সালের জেলে অন্তরীন থাকা অবস্থায় ১৯৪৯ সালে নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ দলের যুগ্ম সম্পাদকের তিনটি পদের একটিতে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যদিয়ে শেখ মুজিবর রহমানের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ। অপর দুই যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে খোন্দকার মোশতাক আহমদ এবং এ কে রফিকুল হোসেন। ১৯৫০ সালে ভুমি সংস্কারের অধীনে ব্রিটিশ আমলে প্রবর্তিত জমিদার প্রথা রদ হলেও পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত গুরুত্ব সত্বেও পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সংঘাত বাড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানের দুই অংশের বৈষম্যের কারণে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ দানা বাধঁতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাব এবং স্বৈর দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ ছিল মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা। ১৯৫০ সালে জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের পূর্ব পাকিস্তান আগমন উপলক্ষ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ ঢাকায় দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল বের করে এবং এই মিছিলের নেতৃত্ব দেয়ার কারনে শেখ মুজিব আটক হন দুই বছরের জন্য। ১৯৫২ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারী জেল থেকে মুক্তি লাভের পর ১৯৫৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল ছিলেন।
১৯৫৫ সালের ৫ই জুন শেখ মুজিব আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। এবছর ১৭ জুন পল্টন ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগ আয়োজিত এক জনসভায় ২১ দফা দাবি পেশ করা হয়। ২৩ জুন পূর্ব্ব বঙ্গ হইতে পাকিস্তান গণপরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ও আওয়ামী মুসলিম লীগ যথাক্রমে ১৬ টি ও ১২ টি আসন লাভ করে। ঐদিনই দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন অর্জিত না হলে আইন সভার সকল সদস্যগণের পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের নাম থেকে“মুসলিম” শব্দটি বাদ দেয়া হয়। শেখ মুজিব পূনরায় দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে শেখ মুজিব দ্বিতীয় কোয়ালিশন সরকারের শিল্প-বাণিজ্য-শ্রম-দূর্নীতি বিরোধী ও গ্রাম সাহায্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন।
১৯৫৬ সালের ৯ই জানুয়ারী দৈনিক আজাদ পত্রিকায় শিরোনাম হয় এভাবে: “শাসনতন্ত্র বিলের সমালোচনা, শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক অগণতান্ত্রিক আখ্যা দান”। ১৯৫৬ সালে ৮উ জানুয়ারী আওয়ামী লীগ পরিষদ দলের সেক্রেটারী জনাব মুজিবর রহমান শাসনতন্ত্র বিলটি (১৯৫৬) অগণতান্ত্রিক ও অবাস্তব বলিয়া বর্ণনা করেন। ৯ই জানুয়ারী গণপরিষদে বিলটি পেশ করা হবে। জনাব মুজিব বলেন, গণতন্ত্রকামী ব্যাক্তি মাত্রই খসড়া বিলটি দেখিয়া মর্মাহত হইবেন। এই বিলে জনমতকে যেভাবে উপেক্ষা করা হইয়াছে তাহা প্রকৃতই অভুতপূর্ব। কাজেই পুর্ব পাকিস্তানের জনগন কোনক্রমেই বিলটি গ্রহণ করিবে না কারন এই বিলে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতিদান, যুক্ত নির্বাচন এবং সর্ব্ববিষয়ে সমতা রক্ষার ব্যাপারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিই বিশেষভাবে খেলাপ করা হইয়াছে,পূর্ব্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ এই বিল রচনাকারী বিশেষত যুক্তফ্রন্টের তথাকথিত নির্লজ্জ ওয়াদা ভঙ্গকারীদের কখনই ক্ষমা করিবে না। ১৯৫৬ সালের ৩রা মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ও ২৫ মে পাবনা শহর আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংগঠনিক বিষয় ছাড়াও শহরের বিভিন্ন সমস্যা আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ্রহন নিয়ে এবং ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব রফিউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে একটি শক্তিশালী প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়। শহর আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলনে যোগদানের জন্য পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধান জনাব এইচ এস সোহরাওয়ার্দী, পূর্ব পাক আওয়ামী লীগ সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবর রহমান আমন্ত্রিতগণ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৫৭ সালের ৮-১০ ফেব্রুয়ারী তারিখে কাগমারীতে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে এজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস স্থানান্তরিত করা হয়েছিল কাগমারীতে এবং সংবাদকর্মীরা যাতে দ্রুত সংবাদতথ্য প্রেরণ করতে পারে সেজন্য স্থাপন করা হয়েছিল অস্থায়ী ডাকঘর। ১৯৫৭ সালের ৩০শে মে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীসভা থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দেন দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারকরণে। আওয়ামী লীগ কাউন্সিল তার পদত্যাগ সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ১৬ই জুন ১৯৫৭ তারিখের “দৈনিক সংবাদ” পত্রিকায় শিরোনাম হয় এরূপ: শেখ মুজিবের মন্ত্রীপদ চীন সফরের পর ত্যাগ করার পক্ষে কাউন্সিলের রায়”।
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ১১ জন স্বনামধন্য বাঙালী পর্যায়ক্রমে পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন তারা যথাক্রমে আব্দুল মুতালিব মালেক, আব্দুল মোমেন খান, আবুল কাশেম ফজলুল হক, গোলাম ফারুক খান, জাকির হোসাইন, টিক্কা খান, আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী, মির্জা নূরুল হুদা, মুহাম্মদ আযম খান, সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এবং সৈয়দ মুহাম্মদ আহসান।
পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রম দপ্তরের মন্ত্রী জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৩০মে মন্ত্রিপদে ইস্তফা দেন। ১লা জুন দৈনিক ইত্তেফাক-এ রিপোর্টিং হয়“পূর্ব প্রতিশ্রুতিমত শিল্পমন্ত্রীপদে শেখ মুজিবের ইস্তফা দান”জনাব রহমান তার পদত্যাগপত্রে জানাইয়াছেন যে,“আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানের সংগঠনমূলক কাজ করার উদ্দেশ্যে এবং সরকারের হস্ত শক্তিশালী করার জন্যই তিনি মন্ত্রীত্বপদে ইস্তফা দান করিতেছেন”। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান উল্লেখিত পদত্যাগপত্রের জওয়াবে জানাইয়াছেন যে,“মানুষ যেখানে সহজে মন্ত্রিত্ব পদেরপ্রলোভন ত্যাগ করিতে পারে না, সেখানে আপনি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগ সংগঠনকে জোরদার ও সরকারের হস্ত শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে পদত্যাগের অভিপ্রায় জ্ঞাপণ করিয়া এক প্রশংসনীয় নজীর স্থাপন করিয়াছেন”।
১৯৫৭ সালের ৯ই আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত শিরোনাম হয়ে আসে: শেখ মুজিবর রহমানের পদত্যাগপত্র গৃহীত; আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যে আত্মনিয়োগের সঙ্কল্প। প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, প্রাদেশিকমুখ্যমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খানের পরামর্শে গভর্নর জনাব ফজলুল হক গতকল্য (বৃহস্পতিবার) প্রাদেশিক বাণিজ্য ও শিল্প দপ্তরের মস্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিয়াছেন।
উল্লেখ্য যে, শেখ মুজিব কাগমারীতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে মন্ত্রীপদে ইস্তফা দানের স্কংল্প ঘোষনা করেন।
১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মেজরজেনারেল ইস্কান্তার মির্জা এবং সেনা বাহিনী প্রধান আইয়ুব খানদেশে সামরিক আইন জারী করে সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন। সেবছর ১১ই অক্টোবর শেখ মুজিবকে আবার আটক করে জেলে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়। ১৪ মাস আটক থাকার পর মুক্তি পেলেও জেলগেইট থেকে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করে পাকিস্তানী শাসক সামরিক জান্তা। ১৯৬১ সালে ছাড়া পেয়ে গুপ্ত রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। গোপনে অন্যান্য ছাত্রনেতাদের নিয়ে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ গঠনে সক্রিয় হলে ১৯৬২ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন। ১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বাঙালী জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রকৃষ্ট হতে শুরু করে যদিও ৫০-এর মধ্যভাগ হতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীকার প্রশ্নটি উচ্চারিত হতে থাকে। ১৯৬৩ সালের ৫ই ডিসেম্বর বৈরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইন্তেকাল করলে ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারী শেখ মুজিব আওয়ামী লীগ প্রধানের (মহাসচিব) দায়িত্ব গ্রহণ করে দলকে পাকিস্তানের বৃহৎ রাজনৈতিক প্লাটফর্মে উন্নীত করেন। সেসময় দলের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে। ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্যে আইয়ুব বিরোধী মুসলিম লীগ নেতা খাজা নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধী দল বা কপ প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দোলনের মাইলফলক। কপ-এর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ছিল: আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, নেজামে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলাম। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারী লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিব তার ভাষনে ঐতিহাসিক“৬-দফা দাবি” পেশ করেন। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ দফা উত্থাপন করা হয় ১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ লাহোর প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রেখে। ছয় দফা ছিল মূলত: ম্যাগনা কার্টা খ্যাত বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদ।
১৯৬৮ সালে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার” (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত) দায়ের করা হয় যার অন্যতম আসামী ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। এ মামলাটি করা হয় ৩৫জনকে আসামী করে। ১৯৬৮ সালের ১৭ই জানুয়ারী শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের আন্দোলন গ্রাম-গঞ্জ-শহরের সকল পেশা শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পান এবং ২২শে ফেব্রুয়ারী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান সরকার। উত্তাল গণ-আন্দোলনে ১৯৬৯ সালের ২৫মার্চ জেনারেল আইয়ুব খানের পতন ঘটে তবে সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে।
সামরিক শাসনব্যবস্থার মধ্যেই ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে এবং পাকিস্তানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু বিপুল ভোটে জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েও পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনৈতিকদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রেসিডেন্টজেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে বিরত থাকে।
ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের অক্টোবরে হওয়ার কথা থাকলেও বন্যার কারণে ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যায় এবং কিছুক্ষেত্রে ১৯৭১ সনের জানুয়ারী পর্যন্ত গড়ায়। সেই নির্বাচনে ২৪টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। ৩০০টি আসনে ১,৯৫৭জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়লেও ১,৫৭৯জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করে। আওয়ামীলীগ সেসময় ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয় যার মধ্যে ১৬২টি পূর্ব পাকিস্তানে ও ৮টি পশ্চিম পাকিস্তানে। অন্যদিকে জামাতে ইসলামী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী (১৫১টি) দেয় এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি মাত্র ১২০ আসনে প্রার্থী দিতে পারে (যার মধ্যে ১০৩টি ছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে)। পূর্ব পাকিস্তানে পিপলস পার্টির কোন প্রার্থী ছিল না। যেখানে পাকিস্তান জাতীয় সংসদের ৩০০ টি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ১৫১টি আসন সেখানে আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসন অর্জন করলেও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে জনগনের ম্যান্ডেট অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানা করে।
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ১৯৭০, ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় সংসদে ৩০০টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন যেখানে ১৫১টি আসন সেখানে আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসন পেয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বর ও ১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৬৯ জন এবং পূবৃ পাকিস্তান আইন পরিষদের ৩০০ জন সদস্যসহ মোট ৪৬৯ জন সদস্যের সমন্বয়ে প্রভিশনাল কন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার ১৯৭২ এর অধীনে বাংলাদেশ গণপরিষদ গঠিত হয়। গণ-পরিষদের প্রথম অধিবেশন ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকার তেজগাওস্থ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল ১৫টি। ৩১৫ জন সংসদ সদস্য নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন ৭ এপ্রিল তেজগাওস্থ সংসদ ভবনে বসে। বাংলাদেশে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে ১৯৭৮, ১৯৮১, ১৯৮৬ সালে এবং পরোক্ষভাবে নির্বাচন হয় যথাক্রমে ১৯৭৪, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০২, ২০০৯, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে (এ পর্যন্ত মোট ১১ টি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়)।
বিশ্ব ইতিহাসে বাঙালী জাতির অহংকার এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব যিনি বিশ্ব দরবারে একটি মহান জাতি হিসাবে বাঙালী জাতিকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। যিনি কয়েক যুগ ধরে বৃটিশ-ভারত ও পাকিস্তান শাসনামল দ্বারা শোষিতনির্যাতিত-ভুখা দরিদ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন, তিনি এই বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে (তৎকালীন বৃটিশ-ভারত শাসনামলে বাঙালা প্রদেশ) গোপালগঞ্জ সিভিল কোর্টের সেরেস্তাদার শেখ লুৎফর রহমানের ঘরে বাংলার আলোর বাতিঘর হয়ে ধরিত্রিতে আসেন ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে। তার আগমন এবং সংগ্রামশীল নিষ্ঠার ফসল আজ বাঙালী জাতির উন্নত মম শির বিশ্ব দরবারে উৎভাষিত। বাংলাদেশ আজ মহাকাশ বিজয়ের অংশীদার হিসাবে গর্বিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের মাধ্যমে। অতি সাধারণ ঘরের সাধারণ মানুষটি একদিনেই একজন মুজিব, একজন বঙ্গবন্ধু, একজন জাতির জনক হয়ে ওঠেননি, স্বীকার করতে হয়েছে অনেক ত্যাগ, হতে হয়েছে ধর্য্যশীল, উত্তীর্ন হতে হয়েছে কর্মনিষ্ঠায় এবং অধিকার আদায় সংগ্রামে থাকতে হয়েছে অবিচল। বিশ্বয়কর প্রতিভা সমেত মানুষটি ভরপুর ছিল মানুয়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস-ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাভরা হৃদয় নিয়ে।
১৯৫৪ সাল হতে পাকিস্তান সরকারের ভিতরে থেকে বাঙ্গালী জাতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ কাজের ন্যায্যতা নিয়ে শাসকগোষ্ঠীকে শত চেষ্টা করেও বাংলার মানুষের দু:খকথা বোঝাতে পারছিলেন না। বছর বছর মামলা ও গ্রেফতার হয়েও যিনি ভুখা-দরিদ্র, নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ক্লান্তবোধ করেননি। এ বাংলার মানুষের ন্যায্য দাবির প্রতি শাসকগোষ্ঠীর উদাসীন্যতা উপলব্ধি করে বিভিন্ন কারণে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মনস্থির করেন। ১৯৫৭ সালে মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দলের সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়োগ করে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙ্গালী অধ্যষিত ভুখন্ডের মানুষের ন্যায্য দাবি আদায়ের সংগ্রামকে স্বাধীকার আন্দোলনে চালিত করে কাঙ্খিত স্বাধীনতার লাল সূর্য সমেত পতাকা প্রাপ্তির আস্বাদ দিয়েছেন যিনি, তিনি একজন স্বপ্নজয়ী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী শ্রদ্বেয় ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু।
মন্তব্যঃ সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ 17984 বার।